বোকাফুল


পর্ব ১


 "বিয়ের পর বরকে সকাল -বিকাল নিয়ম করে তিনবেলা বউয়ের ঠোঁটে চুমু খেতে হয়, এটা আপনি জানেন না রিহান ভাই? বউকে'কে চুমু দিলে ছেলেদের চেহারায় গ্লো বাড়ে, চুল পড়া কমে যায় এবং আয়-রোজগার বাড়ে।"

সদ্য ছ্যাকা খাওয়া নেতা রিহান চৌধুরী 'কে বাবা-মায়ের চাপে ঘরোয়া ভাবে বিয়ে করতে হয় এক কিশোরী'কে। মেয়েটা তার চাচা'তো বোন মায়া। চঞ্চল হরিণী মেয়েটার মুখে কিছু আঁটকায় না যেন। বিয়ের পরপরই চলে এসেছে রিহানের রুমে। উদ্দেশ্য তাকে জ্বা'লা'নো! সদ্য বিবাহিত স্ত্রী মায়া'র মুখে এহেন কথা শুনে চোখ গরম করে তাকালো রিহান। এরপর ধমকে বললো,
"আমার রুম থেকে এক্ষুণি বেরিয়ে যা মায়া। তোকে আমি বউ হিসেবে মানি না। সেখানে চুমু খাওয়া বিলাসিতা। স্টুপিট একটা।"
"এ্যাঁ বললেই হলো, আজ থেকে আমি আমার জামাইয়ের রুমেই থাকবো। বউ হিসেবে মানেন না বুঝলাম, তবে এখন থেকে মেনে নিবেন রিহান ভাই। আমি আপনার একমাত্র বউ, আপনার সবকিছুতে আমার অধিকার রয়েছে। আমি আবার আমার অধিকারের ক্ষেএে খুব সচেতন। দিন এখন একটা চুমু দিন।"
"সিরিয়াসলি মায়া? তোকে এখন চুমু খেতে হবে আমার।"
"অবশ্যই। জামাই....! "
"আমাকে একদম জ্বালাবে না মায়া। আমি খুব টায়ার্ড, ঘুমাবো এখন। তুই নিজের রুমে যা।"
বলতে বলতে বিছানায় সুয়ে পড়লো রিহান চৌধুরী। মায়া চটজলদি বললো,
"আমিও আপনার সাথে ঘুমাবো নেতা সাহেব। এই শীতে বিয়ে করছি কি বিবাহিত ব্যাচেলর থাকার জন্য?"
পরমুহূর্তে মায়াও রিহানের কম্বলের ভিতর ঢুকে পড়লো। রিহান নিশ্চুপ। এই মেয়ের সাথে কথা বাড়ানো মানেই এর পাগলামির মাএা বাড়ানো। হঠাৎ মায়া নিজের ঠান্ডা দু'হাত রিহান চৌধুরী'র টি-শার্টের ভিতর ঢুকিয়ে দিয়ে গুণগুণ করে বললো,
"জামাই, জামাই, জামাই চাই.... জামাই ছাড়া এই শীতে উপায় নাই, জামাইর কাছে আদর চাই। ও আমার জামাই।"
বলতে বলতে হাত দিয়ে মায়া সুড়সুড়ি দিচ্ছে রিহানের পেটে। আকস্মিক মেয়েলী স্পর্শে গায়ে কা'টা দিয়ে উঠছে শক্তপোক্ত পুরুষটির। অজানা অনুভূতি'র শিহরণ বইছে হৃদয় জুড়ে। তবুও রিহান শক্ত হয়ে নিজের ইচ্ছে'কে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। কিন্তু, রিহান যতটা শক্ত হতে চাইছে, এই মেয়ের পা'গ'লা'মি ততটা বাড়ছে। এক পর্যায় রিহান চৌধুরী শক্ত হাতে মায়ার কোমড় জড়িয়ে ধরে ফিসফিস করে বললো,
"জামাইয়ের খুব আদর পেতে ইচ্ছে করে তোর তা-ই না? আমাকে উস্কে দিচ্ছিস না, এবার দেখি কতটা সহ্য করতে পারিস তুই।"
এক ঝটকায় দুষ্ট বালিকা'কে কাছে টেনে নিলো রিহান চৌধুরী। পুরুষালী ছোঁয়া পেয়ে জমে গেলো মায়া। শক্ত হাতের স্পর্ষে কা'ত'র হয়ে নিজেকে ছাড়াতে চাইলো। ভয়ে তার শরীর কাঁপছে। ছাড়লো না রিহান চৌধুরী, আরো গভীর হলো সে। এক সময় মায়াও শান্ত হয়ে উপভোগ করছে প্রিয় মানুষটির ছোঁয়া। পরক্ষণে ক্রো'ধ নিয়ে পেটে কামড় বসিয়ে দিলো রিহান চৌধুরী। তাকে জ্বালানোর শাস্তি হিসেবে, রোমান্টিক অত্যাচারে পি'ষে দিচ্ছে মায়ার ছোট্ট দেহখানি। বুঝতে পেরে চুপচাপ মায়া।যদিও তার কষ্ট হচ্ছে, তবুও হার মানা'র মেয়ে সে নয়। কারণ, এই পুরুষটিকে মনেমনে ভীষণ ভালোবাসতো সে। এটাই তার বহু কাঙ্ক্ষিত পুরুষ।
.
.
সকালে গোসল সেরে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়েছে রিহান চৌধুরী। মায়া লাজুক হেসে, নিজের পছন্দ অনুযায়ী শার্ট - প্যান্ট এগিয়ে দিলো তাকে। রিহান সেসব না নিলেও জোড় করে কালো রঙের একটা শার্ট স্বামী'কে পড়িয়ে দিলো মায়া। এরিমধ্যে রিহানের জরুরী ফোন।
উপর মহল থেকে এক্ষুণি জরুরী তলব এসেছে। না খেয়েই অফিসে চলে গেলো রিহান।
বেলা বারোটায় খাবার নিয়ে অফিসে চলে গেলো মায়া। কেননা লোকটা বাহিরের খাবার খেতে পারে না একদম। নিশ্চয়ই না খেয়ে আছে।
নিজের অফিসে মায়াকে দেখে রিহান চৌধুরী অবাক হয়ে বললো,
"তুই এখানে?"
"আপনার জন্য খাবার নিয়ে এসেছি।"
মনে মনে সন্তুষ্ট হলো রিহান চৌধুরী। প্রচুর ক্ষুধা ও পেয়েছে তার। জানালো,
" রেখে দে, পরে খেয়ে নিবো। কয়েকটা ফাইল চেক করা বাকি আমার।"
"আপনি দেখুন, আমি খাইয়ে দিচ্ছি। "
রিহান অমত করলেও মায়া খাবার বের করে এক লোকমা ভাত মুখের সামনে ধরলো তার। বাধ্য হয়ে, খেয়ে নিলো রিহান। রিহান ফাইল চেক করছে আর মায়া তাকে খাইয়ে দিলো পুরোটা। খাওয়া শেষ করে নিজের আঁচল দিয়ে মুখ মুছে দিলো।
এরপর থেকে দিনদিন মায়ার পাগলামি, ভালোবাসা, যত্ন বেড়েই চলেছে। রিহান না চাইলেও, তার অধিকার জোড় করে যেন ছিঁনিয়ে নেয় মেয়েটা।
দিনদিন রিহান চৌধুরী পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে যাচ্ছে অর্ধাঙ্গিনী'র উপর। বউয়ের যত্ন, ভালোবাসা পেয়ে ভুলে গিয়েছে প্রথম ক্ষ'ত।
_________
বিয়ের তিন বছর পর। নয় মাসের উঁচু পেট নিয়ে হাসপাতালের বেডে সুয়ে আছে মায়া। রিহান চৌধুরী মাএই খবর পেয়ে ছুটে এসেছে। তার চোখে-মুখে চিন্তার ছাপ, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। দৌড়ে গিয়ে মায়ার হাত ধরে উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বললো,
" তুই ঠিক আছিস, খুব কষ্ট হচ্ছে জান?"
চিন্তিত স্বামীকে আশ্বাস দিয়ে মায়া বললো,
"আমি ঠিক আছি নেতা সাহেব। আপনি চিন্তা করবেন না। "
বলতে বলতে নিজের হাত দিয়ে স্বামীর কপালের ঘাম মুছে দিলো মায়া। সন্তান সম্ভবা মায়া। ডক্টর জানালো রোগীর শরীরের কন্ডিশন তেমন ভালো নয়। আজই সিজার করাতে হবে। রিহান চৌধুরী"র বুক অজানা ভয়ে কেঁপে উঠলো, দু'হাতে আধ-পাগলা বউকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো। এই মেয়েটার যত্ন, ভালোবাসার কাছে বরাবর হেরে গিয়েছে রিহান চৌধুরী। প্রথম প্রেমে প্রতারিত হয়ে, ভালোবাসা এবং মেয়েদের প্রতি এক প্রকার ঘৃণা জমেছিল মনে। শুধু মাএ এই মেয়েটার জন্য, কঠিন রিহান চৌধুরী'র ক্ষত হওয়া দ'গ্ধ মনে পুনরায় ভালোবাসার ফুল ফুটেছে।
একটু একটু করে দ্বিতীয় বার ভালোবেসেছে প্রিয়তমা স্ত্রী'কে। মেয়েটার কিছু হয়ে গেলে, সে কি করে বাঁচবে?
হঠাৎ দুশ্চিন্তা গ্রস্ত স্বামীর কাঁধে হাত দিয়ে মায়া বলে উঠলো,
"ভয় পাবেন না নেতা সাহেব। আপনার পিছু এতো তাড়াতাড়ি আমি ছাড়ছি না। আপনাকে এখনো অনেক জ্বালানো বাকি।"
এতো এতো টেনশনে'র ভিতর মেয়েটার এহেন কথায় হেসে দিলো রিহান চৌধুরী। মায়া স্বামী'র বুকে মাথা রেখে পুনরায় বললো,
"আমাকে একবার ভালোবাসি বলবেন নেতা সাহেব?"
রিহান ততক্ষণাৎ মায়ার কপালে চুমু খেয়ে বললো, " তোমাকে খুব ভালোবাসি বোকা ফুল। একদম ভয় পাবে না জান, কিচ্ছু'টি হবে না তোমার। তোমার নেতা সাহেব তোমার সঙ্গে রয়েছে।"
মায়া প্রশান্তিতে চোখ বন্ধ করে বললো, "এবার মরে গেলেও আমি শান্তি পাবো নেতা সাহেব।"
"ওমন করে বলে না জান! খুব ভালোবাসি তোমাকে।আমার বোকা ফুল...
তোমাকে আমি হারাতে দিবো না বোকাফুল, দরকার হলে রবের কাছে তোমাকে ভিক্ষা চাইবো। তবুও তুমি আমার হয়ে আমার সঙ্গে থাকবে। যতদিন তোমার নেতা সাহেব আছে ততদিন তুমি কোথাও যেতে পারবে না।"
মায়া রিহানের কপালে গাঢ় চুমু দিয়ে আরো একটু শক্ত করে স্বামী'কে জড়িয়ে ধরে বললো,
"আপনিও একদম চিন্তা করবেন না নেতা সাহেব। আমি এই যাবো আর এই আমাদের বাচ্চা'কে সঙ্গে করে নিয়ে আসবো।"
এরিমধ্যে ডক্টর এসে অপারেশন থিয়েটার নিয়ে গেলো মায়া'কে। রিহান চৌধুরী অস্হির হয়ে করিডোরে অপেক্ষা করছে, বারংবার রবের নিকট বউয়ের জন্য দোয়া করছে। এই মেয়েটার জন্য ধোঁকা খাওয়া অগোছালো পুরুষটি পুনরায় হাসতে শিখছে, বাঁচার মতো বাঁচতে শিখেছে।
নারীর ভালোবাসা ভয়ংকর সুন্দর হয় ভাই।
নারী তার শখের পুরুষ'কে অসম্ভব ভালোবাসে। একমাত্র একজন নারী'ই পারে ভালোবাসা দিয়ে একজন ভেঙে গুঁ'ড়ি'য়ে যাওয়া পুরুষ'কে পুনরায় বাঁচাতে।
চলবে,,,,,,,,,

Post a Comment

0 Comments